A calm and serene moment |
একটি উদাহরণ বলি, তানিয়া ক্লাস সিক্সে পড়ে। দুইদিন পরে ওর পরীক্ষা। আজ হঠাৎ করে, ওর নোট খাতার উপর এক গ্লাস পানি ফেলে দিয়েছে। তানিয়া চিন্তা করছে, "আহ! আমি কি করলাম! আমি সবকিছুতেই সমস্যা তৈরি করি। পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেল করব।" তানিয়ার এই ধরনের চিন্তা আসলে একটি মানসিক প্রবণতা, যাকে বলে "ক্যাটাস্ট্রোফাইজিং"। এর মানে হলো, কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিতে সবসময় সবচেয়ে খারাপ কিছু ঘটবে ভেবে নেয়া।
এখন আমি আরেকটা গল্প বলি। আবির ক্লাস এইটে পড়ে। বিকেলে বন্ধুর সাথে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। কিন্তু বন্ধু হঠাৎ মেসেজ করে জানালো যে সে আসতে পারবে না। আবির তখন ভাবতে শুরু করল, "কেউ আমার সাথে সময় কাটাতে চায় না। আমার জীবনে কোনো বন্ধু হবে না, আমি চিরকাল একা থাকব।" আবিরের এই ধরনের চিন্তা হলো "ওভার জেনারালাইজেশন"। এর মানে, একটি মাত্র ঘটনা দেখে ভবিষ্যতের সবকিছু একই রকম হবে বলে ধারণা করা।
তানিয়া ও আবির দুজনেই মানসিকভাবে চিন্তা-ভাবনার অন্ধিকাল পার করছে। এই বয়সে এমন চিন্তা আসা খুবই স্বাভাবিক। তবে এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য কিছু সহজ টেকনিক রয়েছে। আজকে আমি তোমাদের এমন একটি সহজ টেকনিক শিখিয়ে দেব, যার তিনটি ধাপ: ক্যাচ ইট, চেক ইট, চেঞ্জ ইট।
১. ক্যাচ ইট (Catch It):
প্রথম ধাপ হলো চিন্তাটা ধরতে শেখা। অনেক সময় আমরা খেয়ালই করি না যে নেতিবাচক চিন্তা আমাদের মাথায় ঘুরছে। বুঝতেই পারি না যে, এর ফলে আমাদের মন খারাপ হচ্ছে। তাই প্রথম কাজ হলো এমন চিন্তা চিনে ফেলা। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, "আমি কি সবসময় সবচেয়ে খারাপ কিছু হবে ভেবে নিচ্ছি? একটা ঘটনা দেখে কি ভবিষ্যতও একই রকম হবে বলে ভাবছি?" এভাবে নিজের চিন্তা ধরতে পারাই হলো প্রথম কাজ।
২. চেক ইট (Check It):
দ্বিতীয় ধাপ হলো চিন্তাটা যাচাই করা। আমাদের ধারণা কি আসলেই সত্য? এর কোনো প্রমাণ আছে? যেমন, তানিয়া চিন্তা করছে, সে সবসময় কিছু না কিছু নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু আসলে কি তাই? হয়তো সে একবার নোট ভিজিয়েছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সে সবকিছুই নষ্ট করে। আবার আবিরের ক্ষেত্রে, বন্ধু আজকের প্ল্যান ক্যান্সেল করেছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সে আর কখনোই ঘুরতে যাবে না। বন্ধু হয়তো অন্য সময়ও আবিরের সাথে ছিল, আজ হয়তো সত্যিই ব্যস্ত ছিল। তাই চিন্তাগুলো যাচাই করা জরুরি।
৩. চেঞ্জ ইট (Change It):
শেষ ধাপ হলো চিন্তাটাকে পরিবর্তন করা। তানিয়া যেমন ভাবতে পারে, "আমি নোট ভিজিয়েছি, তবে এরপর থেকে আরো সতর্ক থাকব। হয়তো পানির গ্লাস আর টেবিলে আনব না।" আবিরও চিন্তাটা পাল্টে বলতে পারে, "আজকে বন্ধু আসেনি, তবে আমরা অন্যদিন আবার প্ল্যান করব।" এভাবে নেতিবাচক চিন্তাগুলো পরিবর্তন করলে মানসিকভাবে অনেকটাই হালকা লাগবে।
এই তিনটি ধাপ: ক্যাচ ইট, চেক ইট, চেঞ্জ ইট শিখে নিলে, নেতিবাচক চিন্তাগুলোর সাথে সহজেই লড়াই করা যায়। আরেকটা বিষয় মনে রাখবে, এই ধরনের চিন্তা আমাদের সবার মধ্যেই আসে, বড়দেরও আসে। এটা জীবনেরই একটি অংশ। তবে যদি মনে হয়, চিন্তাগুলো অনেক বেশি হচ্ছে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছো না, তাহলে পরিবারের বড়দের সাথে কথা বলো। তারা তোমাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন, প্রয়োজনে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।