নবজাতকের পায়খানা না হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং করণীয় নিয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শসহ ঘরোয়া প্রতিকার এবং ডাক্তারি ওষুধের বিস্তারিত তথ্য |
নবজাতক বা এক, দুই, তিন মাসের বাচ্চাদের পায়খানা না হলে কি করণীয় তা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জানাটা খুবই জরুরী। আপনার বাচ্চার কি কারণে পায়খানা হচ্ছে না তার কারণ আপনাকেই নিরুপন করতে হবে। সাধারণত নবজাতক বা ১, ২, ৩ মাসের বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার সমস্যা ও কান্নাকাটি করা বাবা মাকে চিন্তায় ফেলে। সাধারণত ১ - ৩ দিন পর্যন্ত নবজাতক পায়খানা বা টয়লেট না করাটা স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে নবজাতক বা বাচ্চার পেট শক্ত হয়েছে কি না। যদি পেট শক্ত না হয় এবং পায়ু পথে বায়ু বের হয় তাহলে ৩ দিন পর্যন্ত পায়খানা না করলেও তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে শিশু যদি কান্না করে তাহলে এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। এছাড়া শিশুর ১ থেকে ৩/৬ মাসের মধ্যে টয়লেট ও পেটের সমস্যার জন্য ঘরে কিছু ওষুধ রাখতেই হবে যা আমরা এই পোস্টে জানবো।
নবজাতকের পায়খানা/টয়লেট না হওয়ার কারণ সমূহ:
১-৬ মাসের বাচ্চাদের পায়খানা ঠিকমতো না হওয়ার কারণ তারা শুধুই মায়ের দুধ পান করে। এবং যা সহজেই হজম হয়ে যা। ফলে পেটে যথেষ্ট পায়খানা জমা হয়না। ফলে ১ থেকে ৩ এমনকি ৪ দিন পর্যন্ত পায়খানা না করলেও তাদের সমস্যা হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ বার প্রসব করছে কি না। এছাড়া বিশেষ করে ১ থেকে ৩ মাসের বাচ্চাদের পরিপাকতন্ত্র খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে। ফলে তাদের পেটে গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিক, পেটফাঁপা, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য হয়ে থাকে।নবজাতকের পায়খানা না হলে করণীয়:
- খাবার পর ঢেকুর কাটানো: শিশুকে প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পর কাঁধে নিয়ে কিছুক্ষন পিঠ মালিশ করে অবশ্যই ঢেকুর কাটলো কি না নিশ্চিত করবেন। কারণ শিশুরা প্রতিবার খাবার সময় দুধের সঙ্গে বাতাসও খেয়ে ফেলে। যা বের না হলে গ্যাস্ট্রিক ও পেটের সমস্যা তৈরী করে ফলে বাচ্চারা কান্না করে। এছাড়া পায়ের উপর উপুড় করে শুইয়ে পিঠ পেট মালিশ করে দেবেন।
- টয়লেট হওয়ার জন্য ব্যায়াম করানো: নিয়মিত পা ধরে পেটে চাপ পায় সেভাবে ব্যায়াম করতে হবে। পেটের উপর থেকে নিচের দিকে মালিশ করতে হবে।
নবজাতকের পায়খানা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
প্রথম মাসে:
সাধারণত, নবজাতক দিনে প্রায় একবার পায়খানা করে।বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা:
শুধু বুকের দুধ খেলে, নবজাতক ৩ থেকে ৭ দিন পরপর পায়খানা করতে পারে।কোষ্ঠকাঠিন্যের ধারণা:
যদি পায়খানা অত্যন্ত শক্ত না হয়, তবে সেটিকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।
শিশুদের ওষুধ ব্যবহার:
নবজাতকের ১ থেকে ৩ মাস নিত্যদিনের সঙ্গী দুটি ওষুধ ঘরে রাখতেই হবে। যে দুটি ওষুধ ১ মিলি করে দিনে ৩ বার খাওয়াবেন। ৪ থেকে ৬ মাসের বাচ্চাদের ২ মিলি করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে যদি ১ মিলিতে কাজ না হয়।- ফ্ল্যাকল (Flacol) অথবা গ্যাসনিল (Gasnil) পেডিয়াটিক ড্রপ: - এটি শিশুর গ্যাসট্রিক এর ওষুধ। ও মল নিষ্কাশন নিয়মিত করে। জন্মের প্রথম দিন থেকে এটি খাওয়ানো যায়।
- মটিগাট (Motigat) পেডিয়াটিক ড্রপ: এটি পেটব্যাথা ও পেটের বদহজম উপশম করে ও পায়খানা ঠিকঠাক হতে সহায়তা করে।
ঘরোয়া উপায়ে পানের বোটা নবজাতক বা শিশু বাচ্চাকে টয়লেট করানো:
নবজাতক বা শিশুর পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহার করে টয়লেট করানো:
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
নবজাতকের পায়খানা না হওয়া কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, নবজাতকের ক্ষেত্রে ২-৩ দিন পায়খানা না হওয়া স্বাভাবিক। নবজাতকরা শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করে, যা সহজেই হজম হয়ে যায় এবং পায়খানার প্রয়োজন তেমন হয় না। তবে ৩ দিনের বেশি সময় ধরে পায়খানা না হলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
নবজাতক বা শিশুর পায়খানা না হলে পেট শক্ত হওয়া কি বিপজ্জনক?
পেট শক্ত হয়ে গেলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ হতে পারে এবং এটি নবজাতকের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। যদি পেট শক্ত হয় এবং বাচ্চা প্রচণ্ড কান্না করে, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার জন্য ঘরোয়া সমাধান কী?
ঘরোয়া সমাধানের মধ্যে পায়ের ব্যায়াম করানো, পেট ও পিঠে হালকা করে মালিশ করা, এবং পানের বোটা ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও শিশুর ঢেকুর কাটানো নিশ্চিত করতে হবে।
১ থেকে ৩ মাসের বাচ্চার পায়খানা হওয়ার জন্য কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োজন?
পেডিয়াট্রিক ড্রপ যেমন ফ্ল্যাকল (Flacol) বা গ্যাসনিল (Gasnil) নবজাতকের গ্যাসট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। মটিগাট (Motigat) ড্রপ পেটব্যাথা ও বদহজমের জন্য কার্যকর। তবে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত।
নবজাতকের পায়খানা না হলে সাপোজিটরি (Glycerin Suppository) ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
Glycerin সাপোজিটরি নবজাতক ও শিশুর পায়খানা হওয়ার জন্য দ্রুত সমাধান হতে পারে। এটি নিরাপদ তবে সঠিক ডোজ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। প্রথমে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
নবজাতকের পায়খানা না হলে কোন ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত?
নবজাতক বাচ্চাদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। পায়খানা না হওয়ার সমস্যায় কোনো অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মায়ের দুধই যথেষ্ট পুষ্টি ও পানি সরবরাহ করে।
নবজাতকের পায়খানা ঠিকমতো না হলে ডাক্তার দেখানো কবে জরুরি?
যদি নবজাতকের পেট খুব বেশি শক্ত হয়ে যায়, বাচ্চা প্রায়ই কান্না করে এবং পায়খানা না হওয়ার সাথে সাথে বায়ুও বের না হয়, তবে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
৩ মাসের বাচ্চা কয়বার পায়খানা করা স্বাভাবিক?
৩ মাসের বাচ্চাদের দিনে ১-৩ বার পর্যন্ত পায়খানা করা স্বাভাবিক, তবে ২-৩ দিন পায়খানা না হলেও সমস্যা হয় না। যদি শিশুর পেট ফাঁপা বা শক্ত হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুর পায়খানা সহজ করার উপায় কী?
শিশুর পায়খানা সহজ করার জন্য পেটের ব্যায়াম, পিঠে হালকা চাপ দিয়ে মালিশ করা এবং ঢেকুর কাটানো নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহার করে পায়খানা সহজ করা যেতে পারে।
নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ কী?
নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ সাধারণত মায়ের দুধের পরিপাক। মায়ের দুধ হজম করা সহজ হওয়ায় অনেক সময় ৩-৪ দিন পর্যন্ত পায়খানা না হতে পারে। এছাড়া শিশুর পরিপাকতন্ত্র নাজুক থাকায় পেটে গ্যাস জমা হতে পারে।