সঠিক ও নতুন পদ্ধতিতে নামজারি আবেদন করার নিয়ম | ই নামজারি করার নিয়ম ও সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

সঠিক ও নতুন পদ্ধতিতে নামজারি আবেদন বা জমি খারিজের আবেদন করার নিয়ম দেখবো, ই নামজারি বা ই মিউটেশন করার নিয়ম ও সম্পূর্ণ নির্দেশিকা পাবেন।

ই নামজারি করার নিয়ম ও সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

নামজারি বা জমি খারিজ বা মিউটেশন (mutation) এর মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকানা পরিবর্তন করা হয়।  অনলাইনে নামজারি আবেদন করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের নামজারি সিস্টেমের মাধ্যমে করতে হয়। নামজারি বা জমি খারিজের আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর করা হয়। ই মিউটেশন বা ই নামজারী আবেদন এর প্রতিটি ধাপ শেখা আমাদের প্রত্যেকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জমি কিনলে বা অন্য কোনো উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে জমির দাতা বা মালিকের খতিয়ান হতে নামজারির মাধ্যমে কেটে নিয়ে জমি নতুন খতিয়ানভুক্ত করা খুবই জরুরি। নামজারি বা মিউটেশন এর মাধ্যম যে নতুন খতিয়ান পাওয়া যায় তাকে নামজারি খতিয়ান বলে। জমি ক্রয় বা অন্য কোনো উপায়ে জমির মালিক হওয়ার পর নামজারি বা খারিজ না করলে জমির প্রকৃত মালিক হওয়া যায় না। 

তাই আমি আপনাদের আজ আমার বিগত ৭ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ই নামজারি করার নিয়ম ও সম্পূর্ণ নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করবো। যা আপনার ব্যক্তিগত কাজ এর পাশাপাশি একজন দক্ষ নামজারি কম্পিউটার অপারেটর হতে সাহায্য করবে। এই পোস্টে কিছু নামজারির কৌশল, ট্রিকস, টুলস দেখাবো, যদি আপনার কম্পিউটার বা অনলাইন আবেদন সেবার দোকান বা পয়েন্ট থাকে বা আপনি যদি কোনো ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারী হয়ে থাকেন তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার বর্তমান কাজের গতি বাড়িয়ে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ নামজারি কম্পিউটার অপারেটর হতে পারবেন। জমি সংক্রান্ত কাজে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি স্মার্টলি কাজ করা খুবই গুরুত্তপূর্ণ।

নামজারি আবেদন ও নির্দেশিকা সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল আলোচনায় যা যা থাকছে:

১। জমির কাগজপত্রের খুটিনাটি (নতুনদের জন্য)। খতিয়ান চেনার উপায়। দলিল হাতে কি কোন বিষয়গুলো দেখতে হবে?
২। নামজারি করতে কি কি কাগজপত্র লাগে: আবেদনের ধরণ ভেদে কাগজপত্রের তালিকা।  
৪। অনলাইনে নামজারি আবেদন এট্রি (ই-নামজারি আবেদন ফরম পূরণ)। প্রত্যেকটি ধাপ: কোন ক্ষেত্রে কোন অপশন সিলেক্ট করতে হবে বিস্তারিত থাকবে।
৩। ছোটো থেকে বড় বা জটিল যেকোনো ধরনের আবেদন সাজানোর দ্রুত ও সহজ পদ্ধতি, অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ কিভাবে স্মার্টলি করা যায়। সকল প্রকৃতির আবেদনের নমুনা ফাইল সহ। (নতুন বা অভিজ্ঞ সবার জন্য)। 
৫। নামজারি আবেদন খসড়া সংরক্ষণ। 
৬। দলিলপত্র স্ক্যানিং ও পিডিএফ প্রস্তুত এর জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও টিপস।
৭। নামজারি আবেদন দাখিল ও নামজারী প্রক্রিয়া ট্রাকিং বা ই নামজারি যাচাই
৮। নামজারি আবেদনের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া বা ধাপ, কিভাবে একটি নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি হয়নামজারি হতে কত সময় লাগে। 
৯। আবেদন মঞ্জুরের পর খাতিয়ান ডাউনলোড।
১০। নামজারী খতিয়ানের হোল্ডিং তৈরী ও খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান।

জমির কাগজপত্রের খুটিনাটি

নামজারি করার জন্য কাগজপত্র হাতে নিয়ে আপনার প্রথম কাজ হলো সর্বশেষ জরিপ বা রেকর্ড খতিয়ান কার নামে রয়েছে সেটা লক্ষ্য করা। কারণ নামজারী আবেদনের জন্য সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান থেকে বর্তমানে যিনি দলিল বা অন্যান্য মুলে মালিক তার ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। এর জন্য সর্বশেষ জরিপ বা রেকর্ড খতিয়ান কি তা জানতে হবে। এবং রেকর্ড খতিয়ান হতে জমি কত ভাবে বিক্রি বা হস্তান্তর হতে পারে তা জানতে হবে। 

জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের শর্ত (খতিয়ানের মালিক জীবিত হলে)

বেসরকারী বা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের জন্য ব্যক্তির নামে অবশ্যই সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান অথবা সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান থেকে আগত নামজারী খতিয়ান থাকতে হবে।

দেশের বেশিরভাগ জেলায় আরএস/বিএস খতিয়ান হলো সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান। জরিপ খতিয়ান হতে ক্রয় বা হস্তান্তরকৃত জমি নামজারী বা খারিজ করলে নতুন যে খতিয়ান পাওয়া যায় তাকে নামজারী খতিয়ান বলে।

১৯৯৮ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বিএস খতিয়ান বা সিটি বলা হয়। যা এখনো সারা দেশে চলমান। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে বিএস খতিয়ানকে সিটি জরিপ বলা হয় এই সিটি জরিপের আরেক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ। আর এস জরিপের পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে এ জরিপের উদ্যোগ নেয় এ যাবৎকালে এটিই হলো আধুনিক জরিপ।
বিভিন্ন প্রকার সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান বা আরএস খতিয়ান চেনার জন্য নিচের পোস্ট ২টি পরে আসুন। খতিয়ানের নমুনাসহ সনাক্তকারী বিষয়বস্তু দেয়া আছে।

জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের শর্ত (খতিয়ানের মালিক মৃত হলে)

ওয়ারিশ সনদ মূলে জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর

সর্বশেষ জরিপ বা নামজারী খতিয়ানের মালিক মৃত হলে তার উত্তরাধিকারগণ ওয়ারিশ সনদের দিয়ে দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে একটি খতিয়ান থেকে একজন ওয়ারিশ তার অংশ অনুযায়ী প্রত্যেক দাগে ততটুকুই জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে। একটি দাগ সব বা নিজ অংশের বেশি জমি হস্তান্তর করতে পারবে না।

অথবা ওয়ারিশ মূলে জমি নামজারী বা খারিজ করে, শুধু নামজারী খতিয়ান দিয়ে জমি বিক্রয় বা নিজ  মালিকানাধীন করে রাখা যায়।

ওয়ারিশ সনদ মূলে বন্টনের দলিল হতে নামজারির পর বিক্রয় বা হস্তান্তর

ওয়ারিশ সনদ দিয়ে উত্তরাধিকারগণ একটি বন্টন দলিল করার সুবিধা হলো, উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশগণ তাদের ইচ্ছামতো বা নিজেদের মাঝে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজেদের সুবিধামত দাগে জমি বুঝে নিতে পারে। ফলে নামজারী করতে গেলে প্রত্যেক দাগে জমি না নিয়ে সুবিধামত দাগে জমি নামজারী করতে পারবে বন্টন দলিল দেখানোর মাধ্যমে।
দ্রঃ ওয়ারিশের জমি কেনার ক্ষেত্রে তারা নামজারী বা খারিজ করে আপনার নিকট বিক্রয় করবে। অথবা তারা নিজেদের মাঝে বন্টন দলিল  করে নিজ নিজ নামে পৃথক নামজারী করে বিক্রয় বা হস্তান্তর কবে। এটাই উত্তম পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ক্রেতা হিসেবে আপনার তাদের নামজারী  খতিয়ান থেকে আপনার নামজারী করতে সুবিধা হবে। এছাড়া অসাদু বিক্রতা ওয়ারিশ সনদে ওয়ারিশের নাম গোপন করে আপনার নিকট জমি বিক্রয় বা হস্তাস্তর করার সুযোগ পাবে না। 

নামজারি আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?

দলিলের দাতা নিজে সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান অথবা নামজারি খতিয়ানের মালিক হলে নামজারি আবেদন করতে কি কি লাগে:

১। দাতার রেকর্ডীয় খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান। 
২। গ্রহীতার দলিল।
৩। গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র।
৪। গ্রহীতার ছবি। 

দলিলের দাতা বা দাতাগণ সর্বশেষ জরিপ খতিয়ান অথবা নামজারি খতিয়ান মালিকের ওয়ারিশ হলে নামজারি আবেদন করতে কি কি লাগে:

১। মৃত মালিকের রেকর্ডীয় খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান।
২। মৃত মালিকের ওয়ারিশ সনদ।  
৩। গ্রহীতার দলিল।
৪। গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র।
৫। গ্রহীতার ছবি।

দলিলের দাতা সর্বশেষ জরিপ খতিয়ানের মালিক হতে দলিল মুলে প্রাপ্ত হওয়ার পরও সর্বশেষ নামজারি না নামজারি আবেদন করতে কি কি লাগে:

১। রেকর্ডীয় খতিয়ান।
২। রেকর্ডীয় মালিক হয়ে প্রাপ্ত দলিল। (এই রেফারেন্স দলিল কে বায়া দলিল বলা হয়  । বায়া দলিল এক বা একাধিক হতে পারে)
৩। গ্রহীতার দলিল।
৪। গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র।
৫। গ্রহীতার ছবি।

দলিলের গ্রহীতা নামজারি না করে মারা গেলে গ্রহীতার ওয়ারিশগণ নামজারি আবেদন করতে কি কি লাগে:

১। রেকর্ডীয় খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান। 
২। গ্রহীতার দলিল।
৩। দলিলের গ্রহীতার ওয়ারিশ সনদ।
৪। আবেদনকারী অর্থাৎ ওয়ারিশ বা ওয়ারিশগণের) জাতীয় পরিচয়পত্র। 
৫। আবেদনকারী অর্থাৎ ওয়ারিশ বা ওয়ারিশগণের ছবি।

দলিলের গ্রহীতা নাবালক বা প্রবাসী হলে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে নামজারি আবেদন করতে কি কি লাগে:

১। রেকর্ডীয় খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান। 
৩। গ্রহীতার দলিল।
৪। গ্রহীতার জন্ম নিবন্ধন। 
৫। প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয় পত্র: পিতা, মাতা, ভাই, বোন বা নিকট আত্মীয় গ্রহীতার প্রতিনিধি হয়ে আবেদন করতে পারবে।
৫। গ্রহীতা ও প্রতিনিধির ছবি।

দলিলের একাধিক গ্রহীতার মধ্যে এক বা একাধিক গ্রহীতা নাবালক বা প্রবাসী হলে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে নামজারি আবেদন করতে কি কি লাগে:

১। রেকর্ডীয় খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান। 
৩। গ্রহীতাগণের দলিল।
৪। নাবালক ও প্রবাসী গ্রহীতার জন্ম নিবন্ধন। 
৫। জাতীয় পরিচয়পত্র ধারী গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র।  
৫। গ্রহীতাগণের ছবি। 
দ্রষ্টব্যঃ জাতীয় পরিচয়পত্র ধারী যে কোনো একজন দলিলের গ্রহীতা নাবালক বা প্রবাসী গ্রহীতার পক্ষে প্রতিনিধি হতে পারবে। অথবা দলিলের গ্রহীতা ছাড়াও নাবালক বা প্রবাসী নিকট আত্মীয় তাদের প্রতিনিধি হতে পারবে। এছাড়া গ্রহীতা নাবালক বা প্রবাসী না হলেও তার পক্ষে একজন প্রতিনিধি থাকতে পারে। 

এছাড়া নামজারী আবেদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাতা/গ্রহীতার ছোটোখাটো নামজনিত সমস্যার জন্য চেয়ারম্যান বা মেয়র কর্তৃক সত্যায়িত দুই নামের সনদ প্রয়োজন হতে পারে।  

অনলাইনে নামজারি আবেদন এট্রি (ই-নামজারি আবেদন ফরম পূরণ)

নামজারি আবেদন এর জন্য আমাদের প্রথমে land.gov.bd তে গিয়ে ই-নামজারি অপশনে যেতে হবে। অথবা সরাসরি  mutation.land.gov.bd এ যেতে পারেন। 

ই-নামজারি তে ৩ টি অপশন থাকে:

১। নামজারি আবেদন: এখানে আবেদন ফরম পূরণ করে সরাসরি সাবমিট দেয়া যায় অথবা খসড়া করে রাখা যায়। 
২। খসড়া আবেদন: এই অপশন এর মাধ্যমে খসড়া করা আবেদন দেখা বা এডিট করে পুনরায় খসড়া সংরক্ষণ বা সাবমিট দেয়া যায়।  উল্লেখ যে, নামজারির খসড়া আবেদন ৭ দিন পর্যন্ত নামজারী সিস্টেম এ থাকে। 
৩। আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা: আবেদন চূড়ান্ত সাবমিট বা দাখিল এর পর আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা অপশন এর মাধ্যমে আবেদন ট্র্যাকিং করতে হয়ে।  এছাড়াও নামজারি মঞ্জুর বা সম্পন্ন হওয়ার পর নামজারির খতিয়ান ও ডিসিআর ডাউনলোড করা যায়।  অথবা ভবিষ্যতে নামজারির খতিয়ান ও ডিসিআর হায়িয়ে গেলে এখন থেকে বের করা সম্ভব। 

নামজারি আবেদন ফরম - ঘোষণা অংশ কিভাবে পূরণ করবো:

নামজারী আবেদনের কোর্ট ফি তৈরি:

নামজারির নতুন নিয়মে আবেদন ফরম পূরণের শুরুতেই ভূমি নামজারি আবেদনের কোর্ট ফি নম্বর তৈরী করতে হয়। 
পরামর্শ: নামজারি আবেদন সহজ করতে লিংক থেকে এক্সেল শিট টি  ডাউনলোড করে বামপাশে গ্রহীতার তথ্য সংরক্ষণ করুন।  কারণ কিছু তথ্য একাধিবার এন্ট্রি করতে হয়ে।  তথ্য সংরক্ষণ করা থাকলে সার্ভার জনিত কারণে আবেদনে সমস্যা হলে পুনরায় ফরম পূরণ করতে বেগ পেতে হয় না।  জটিল বা বড় আবেদন এক্সেল শিট এর মাধ্যমে খুব সহজে প্রি-খসড়া করে যায়। প্রি খসড়া করার সময় কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে সেটা নোট করে আবেদকারীকে অবগত করতে পারবেন। প্রথমেই সরাসরি অনলাইন ফরম এ বড় বা জটিল কাজ করতে গিয়ে এডিট বা অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রয়োজন হলে কাজটি অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। এছাড়া, আবেদনের তথ্য শীট এ সংরক্ষণ রাখলে আপনার নিজের বা কাস্টমারের কাজের একটি ডাটাবেজ তৈরী হবে যা পরবতীতে কাস্টোমারটিকে আবেদন ট্র্যাকিং ও সাপোর্ট দিতে কাজে লাগবে।  
প্রি-খসড়া আবেদন সিটের নমুনা ডাউনলোড:
যাইহোক, নতুন "নামজারি আবেদনের কোর্ট ফি নম্বর" তৈরি করতে চাই এ ক্লিক যে খতিয়ানের জমির জন্য আবেদন করছেন সেই, জেলা, উপজেলা ও ঠিকানা সিলেক্ট করুন। ঠিকানার জায়গায় জমির মৌজা লিখুন। জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ১০ বা ১৭ সংখ্যার লিখুন। ১৩ সংখ্যার নম্বর হলে শুরুতে ৪ সংখ্যার জন্মসাল দিয়ে ১৭ করতে হবে।
সতর্কতা: নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর এর সামনে বা পিছনে কোনো স্পেস রাখা যাবে না। তাহলে পরবর্তী তে যাবে না। 
সব তথ্য পূরণ করে পরবর্তীতে প্রেস করে পেমেন্ট করলে কোর্ট ফি নম্বর পাওয়া যাবে। কোর্ট ফি নম্বরটি কপি করে শিট এ সংরক্ষণ করুন। কোনো ভাবে কপি করতে না পারলে আবেদনকারীর মোবাইলের এসএমএস থেকে কোর্ট ফি নম্বর সংগ্রহ করুন।

জমির মালিকানা সূত্র:

দলিলের ধরণ বা মালিকানা হস্তান্তরের ধরণ অনুযায়ী সিলেক্ট করুন। যেমন:
১। ক্রয়: কবলা, সাফ-কবলা, বিক্রয়-কবলা দলিল মুলে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে। 
২। ওয়ারিশ: ওয়ারিশ সনদ মুলে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে। 
৩। হেবা: হেবা, হেবা-বেল এওয়াজ মুলে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে।
৪। ডিক্রি: মামলার মাধ্যমে কোনো জমির মালিকানা পেলে কোর্ট রায় এর ডিক্রি প্রদান করে এ ক্ষেত্রে ডিক্রি সিলেক্ট করতে হবে। 
৫। নিলাম: নিলামে প্রাপ্ত জমি বা প্লট এর ক্ষেত্রে। 
৬। বন্দোবস্ত: খাস জমি বন্দোবস্ত দলিল এর ক্ষেত্রে। 
৭। অধিগ্রহণ: অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষেত্রে।
৯। অন্যান্য: বন্টননামা দলিল, উইল দলিল, অছিয়ত দলিল, নিজ  রেকর্ড খতিয়ান থেকে নিজের নামে নামজারি করার ক্ষেত্রে সিলেক্ট করতে হবে।
উল্লেখ্য: শুধু গ্রহীতার দলিলের ধরণ অনুযারী মালিকানা সূত্র সিলেক্ট করতে করা আবশ্যক। প্রয়োজনে, একাধিক মালিকানা সূত্র সিলেক্ট করা যাবে। যেমন: ক্রয়, ওয়ারিশ, অন্যান্য (নিজ নাম রেকর্ড) ইত্যাদি।  বায়া দলিল থাকলে তার ধরণ সিলেক্ট না করলেও চলবে। 

প্রশ্ন: নামজারী আবেদনে মালিকানা সূত্র ভুল দিয়ে আবেদন চূড়ান্ত সাবমিট বা দাখিল করলে কি করবেন?
উত্তর: এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এর হেল্প লাইনে কথা বললে তারা বলেন, সঠিক করে পুনরায় আবেদন করার পরামর্শ দেন। তাদের মতে, ভুল আবেদন বাতিল হবে এবং পরের সঠিক আবেদন এর কাজ চলবে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বিষয়টি অবগত করতে হবে। 
ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ বিষয়ে পরামর্শ করলে তারা ২য় বার সঠিক করে আবেদন করার প্রয়োজন মনে করেন না। এটা সমস্যা করবে না। আপনি কখনো এই সমস্যার সম্মুখীন হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা প্রয়োজনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে ফোন করে জেনে নিতে পারেন।
দেশের সকল ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম ও মোবাইল নম্বর পেতে নামজারি অ্যাপ ডাউনলোড করুন: ডাউনলোড লিংক

ক্রেতা/বাদী/গ্রহীতার তথ্য:

#ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির জন্য আবেদন:

  • গ্রহীতা নিজে পুরো আবেদন প্রক্রিয়া করতে চাইলে নিচের মতো করে সিলেক্ট করুন:

  • গ্রহীতার অনুস্পস্থিতিতে কোনো প্রতিনিধি আবেদন প্রক্রিয়া করতে চাইলে নিচের মতো করে সিলেক্ট করুন:

নোট: প্রতিনিধি সিলেক্ট করলে প্রথম পাতায় শুধু প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিতে হবে। দলিলের গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র ২য় পাতায় দিতে হবে। 

  • এক বা একাধিক গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে (জন্ম নিবন্ধন এর ক্ষেত্রে) নিচের মতো করে সিলেক্ট করুন:


জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য:

উল্লেখ্য যে, নামজারি আবেদনে ১০ সংখ্যার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সাপোর্ট করে। স্মার্ট নম্বর না থাকলে ১৭ সংখ্যার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে চাইলে মোবাইলে ওটিপি যাবে। OTP ভেরিফিকেশনের পর নামজারী সিস্টেম, জাতীয় পরিচয় এর ডাটাবেস থেকে আপনার ১০ সংখ্যার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সরবরাহ করবে ব্যবহারের জন্য। এবার ১৭ নম্বরটি কেটে ১০ সংখ্যার নম্বর বসিয়ে পুনরায় ওটিপি ভেরিফাই পরে পরবর্তী পাতায় যান। 

মৌজা নির্বাচন করুন:

খতিয়ানে জেলা, উপজেলা, মৌজা ও জেএল নম্বর দেখে মৌজার তথ্য পূরণ করবেন। 

আবেদন সংক্রান্ত ঘোষণা:

সাধারণত একটি গ্রহণযোগ্য আবেদনে নিচের মতো করে সিলেক্ট করতে হয়। এর বাইরে গেলে সেটা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড বিবেচনা করতে পারেন। যেমন সরকারি স্বার্থ আছে সিলেক্ট করলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।

৪.৭ এ উল্লেখিত: সর্বশেষ অর্থ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর দেয়া আছে কি না? এখানে উক্ত জমির সর্বশেষ বাংলা সাল পর্যন্ত খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর দেয়া আছে কি না খাজনার চেক ভূমি উন্নয়ন কর দাখিলা থেকে দেখে নেবেন।  থাকলে হ্যাঁ সিলেক্ট করবেন।  গ্রহীতা ভূমি উন্নয়ন কর এর দাখিলা বা চেক দিতে না পারলে বা বকেয়া থাকলে না সিলেক্ট করে পরবর্তী করবেন। 

প্রশ্ন ১: নামজারি আবেদনে মহিলাদের পিতার নাম যাচাই না হলে কি করবেন?

উত্তর: আমরা জানি, মহিলাদের পুরাতন ১৩ বা ১৭ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম দেয়া থাকে না। ফলে প্রায়ই নামজারী আবেদন করার সময় দলিল দেখে বা মুখে শুনে পিতার নাম পূরণ করলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ভাবেই যাচাই হয় না। এটা সমাধানের ২টি উপায় আছে: 
১। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রোফাইল তৈরী করে প্রকৃত পিতার নামের বানান দেখে নিতে পারেন।
২। অথবা, গ্রহীতাকে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে পাঠিয়ে বিস্তারিত তথ্যের কপি আনিয়ে নিতে পারেন। 
আমি সাধারণত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রোফাইল তৈরী করে তথ্য বের করে থাকি।  

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রোফাইল তৈরির লিংক: Bangladesh NID Application System | অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার (nidw.gov.bd)

প্রশ্ন ২: নামজারি আবেদনে আবেদনকারী বা গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা/মাতার নাম যাচাই হয় না কেন?
উত্তর: পিতা/মাতার নামের পূর্বে মৃত লেখা থাকলে মৃত কেটে দিয়ে যাচাই বাটনে ক্লিক করুন। 

প্রশ্ন ৩: নামের কোনো অক্ষর এ হসন্ত থাকলে কিভাবে যাচাই করতে হয়? 
উত্তর:
  নামের অক্ষরে হসন্ত থাকলে যদি যাচাই না হয়।  তাহলে অভ্র কীবোর্ড হসন্ত যুক্ত অক্ষর লিখ ২ বার কমা দিলে হসন্ত হবে পরের পরের অক্ষর যুক্ত হওয়া ছাড়াই। এবং যাচাই হবে। 

নামজারি আবেদন ফরম - জমির তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য (নামজারি ও জমাভাগ/জমা একত্রিকরণ)  অংশ কিভাবে পূরণ করবো:

আবেদিত জমির তফসিল:

খতিয়ানের ধরণ: সর্বশেষ রেকর্ড খতিয়ান (যেমন: আরএস) বা নামজারি খতিয়ান সিলেক্ট করতে হবে।  নামজারি খতিয়ান হাতে লেখা/কম্পিউটার কম্পোজ/অনলাইন যাই হোক না কেন সেখানে নতুন বা সর্বশেষ দাগ উল্লেখ্য আছে কি না দেখে নিবেন।  যদি পুরাতন দাগ হয় তাহলে তা ব্যবহার করা যাবে না।  এর পরিবর্তে আরএস খতিয়ান লাগবে।  প্রয়োজনে বায়া দলিল লাগবে। 

নামজারি খতিয়ান চেনার উপায়: খতিয়ানের ডানপাশে আগত খতিয়ান নম্বর থাকবে।  খতিয়ানের বামে, বা খতিয়ানের সঙ্গে প্রদত্ত ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ (DCR) এ হোল্ডিং নম্বর দেয়া থাকে। 

খতিয়ান নং: খতিয়ানের উপরে দেখে খতিয়ান নম্বর বসিয়ে ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করুন।  আপনার খতিয়ান ভূমি মন্ত্রণালয় এর অনলাইন ডাটাবেজে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হয়ে দাগ নম্বরগুলো চলে আসবে, সেখান থেকে দাগ সিলেক্ট করতে হবে।  যাচাই না হলে ম্যানুয়ালি টাইপ করে দিতে হবে। 

মনে রাখবেন: নামজারি আবেদন ফর্ম এর সকল প্রকার নম্বর এর ঘরে ইংলিশ এ নম্বর টাইপ করবেন। এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাংলা সংখ্যায় উঠবে।  দাগ নম্বর বাংলায় না উঠলেও সমস্যা নেই।  ফর্ম সাবমিট এর পর বাংলা হয়ে যাবে।  

দাগ নম্বর: গ্রহীতা দলিল মুলে যে দাগে জমি প্রাপ্ত তা উল্লেখ্য করবেন।  দলিল ও খতিয়ান দেখে নতুন/হাল/আরএস/বিএস দাগ উলেখ্য করবেন।  দলিলে সাবেক/পুরাতন/এসএ দাগ যদি লেখাও থাকে তবু তা দেয়ার প্রয়োজন নেই। 

ব্যতিক্রম: দেশের এখনো কোনো কোনো মৌজায় সর্বশেষ আরএস জরিপ বা রেকর্ড এর গেজেটেড বা প্রিন্টেড  রেকর্ড খতিয়ান প্রদান নাও করতে পারে।  ফলে দলিলে আরএস খতিয়ান  নম্বর দেয়া ও হাল/নতুন দাগ নম্বর দেয়া থাকলেও এসএ খতিয়ান বা এসএ খারিজ বা নামজারি খতিয়ান ও সাবেক/পুরাতন দাগ দিয়ে নামজারি করার প্রয়োজন হতে পারে।  নামজারি বা জমি সংক্রান্ত কাজ নিয়ে কোনো কনফিউশন থাকলে সবার নিচে আমার হোয়াটসএ্যাপ নম্বর এ পরামর্শ নিতে পারেন। 

জমির পরিমান ও জমির মাপক: এখানে দলিলের গ্রহীতা উক্ত দাগে দলিল মুলে যতটুকু জমির মালিক তা লিখবেন।  জমির পরিমান একর এ লিখতে হবে।  কিছু নমুনা: এক একর (১.০০০), এক শতক (০.০১০০), দশ শতক (০.১০০০), সাড়ে দশ শতক বা দশ শতক পঁঞ্চাশ অযুতাংশ (০.১০৫০), দশ শতক পঁঞ্চাশ অযুতাংশ ত্রিশ লক্ষাংশ (০.১০৫০৩০)।

উল্লেখ্য, দলিলে একাধিক গ্রহীতা থাকলে এবং তারা পৃথক ভাবে নামজারি আবেদন করতে চাইলে, দলিল এর ৮ নং ধারা বা পয়েন্টে উল্লেখিত (ক্রেতা/গ্রহীতার) হারাহারি বিবরণ থেকে গ্রহীতাগণের একক ভাবে দাগে জমির অংশ বের করতে পারবেন। 

দলিল নং: আপনার উল্লেখিত খতিয়ান ও দাগ যে দলিলে আছে তার নম্বর লিখুন ও দলিল সম্পাদনের তারিখ, জেলা ও উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিস সিলেক্ট করুন।  একই দাগের একাধিক দলিলও থাকতে পারে।  এছাড়া এক বা একাধিক বায়া দলিলও থাকতে পারে।  আরও দলিল যুক্ত করুন বাটনে ক্লিক করে একাধিক দলিল যুক্ত করতে পারেন। 

সতর্কতা: দলিলের অবিকল নকল বা জাবেদা কপি থাকলে দলিল সম্পাদনের তারিখ লেখার সময় সতর্ক থাকবেন।  কারণে, অনেক সময় দলিল সম্পাদনের তারিখের পরিবর্তে নকল তোলার তারিখ বসিয়ে ফেলতে পারেন।  নকল দলিলের ১ম পাতার সর্ব নিচে বামে, দলিলের ভিতরে ১৮ নং ধারায় সাক্ষীগণের নামের নিচে, ও শেষের হলফনামার পাতায় দলিলের মূল সম্পাদনের তারিখ লেখা থাকে। 

জেনে রাখা দরকার,
একই আবেদনে একাধিক খতিয়ান, একাধিক দাগ, একাধিক দলিল থাকতে পারে। 
একটি আবেদনে এক বা একাধিক গ্রহীতা থাকতে পারে।  একাধিক গ্রহীতা একটি নামজারি আবেদনের মাধ্যমে যৌথ নামজারি খতিয়ান করতে চাইলে অবশ্যই প্রত্যেক দাগে সমান সমান জমি থাকতে হবে।  অথবা জমির আনুপাতিক হার প্রত্যেক দাগে ঠিক থাকতে হবে।  কারণে, জমি সমান সমান বা অনুপাত ঠিক না থাকলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার প্রস্তাবিত নামজারি খতিয়ানে নামের পাশে সঠিক অংশ বা হিস্যা বসানোর সুযোগ নেই। 

বাদী/গ্রহীতার তথ্য: নামজারী আবেদনে বাদী/গ্রহীতার তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনে ফরমে পূরণ হয়ে যায়।  জেলা, উপজেলা সিলেক্ট করুন এবং ঠিকানার ঘরে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে হুবুহু তুলে দিন।  যেমন : বাসা/হোল্ডিং: ৩৬৫, গ্রামঃরাস্তা: সাতগাড়া, ডাকঘর: রংপুর - ৫৪০০, রংপুর সদর, রংপুর সিটি কর্পোরেশন, রংপুর। 

ছবি আপলোডের সময় ছবিকে স্কয়ার সাইজে বা ৩০০x৩০০ পিক্সেল এ ক্রোপ করে আপলোড করুন। একাধিক গ্রহীতা থাকলে আরও গ্রহীতা যুক্ত করুন অপশনে ক্লিক করুন। 

জমির তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য প্রদান শেষ হলে পরবর্তী তে ক্লিক করুন। সর্বনিম্ন একজনের তথ্য দিয়ে পরবর্তী পেজে গিয়ে খসড়া সংরক্ষণ ট্রেকিং নম্বর পাওয়া যায়। পরবর্তীতে খসড়া আবেদনে প্রবেশ করে যে কোনো তথ্য এডিট,  সংযোজন/বিয়োজন  করা যায়।

নামজারী আবেদন ফরম - দাতা/বিবাদীর তথ্য কিভাবে প্রদান করবো:

অনলাইন নামজারি আবেদনে দাতার তথ্য অংশে প্রত্যেকটি খতিয়ানের জন্য দাতার তথ্য দিতে হয়। মনে রাখতে হবে একটি খতিয়ানের মধ্যে থেকে কার নাম হতে কতটুকু জমিটি কর্তন হয়ে দলিল মুলে আপনার আপনার নামজারি খতিয়ান হবে তার নাম লিখতে হবে।

RS খতিয়ান মালিক সরাসরি দলিলে দাতা হলে নিচের মতো করে দাতার তথ্য ফরম পূরণ করতে হবে। উল্লেখ্য, হোল্ডিং এর ঘর খতিয়ানের ভূমি উন্নয়ন কর রশিদ বা নামজারি খতিয়ান হলে (DCR) দেখে লিখতে পারেন। সম্ভব না হলে স্পেস বা হাইপেন দিতে পারেন। মোবাইল নম্বর বিক্রেতা বা বিবাদী কারো নম্বর প্রদান করুন।

RS খতিয়ান মালিক মৃত হওয়ার পর ওয়ারিশগণ দলিল দাতা হলে নিচের মতো করে দাতার তথ্য ফরম পূরণ করতে হবে। ফর্ম পুরোনোর সময় ওয়ারিশ সনদ আপলোড করতে হবে। 

মনে রাখবেন, একটি খতিয়ানের একাধিক মালিক দলিলে দাতা হলে, দলিল এর ৯ নং ধারা বা পয়েন্টে থেকে বিক্রেতা/দাতার হারাহারি বিবরণ দেখে দাতার তথ্যে আলাদা আলাদা ভাবে দাতার নাম ও জমির পরিমান দিতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায়, কিছু পুরোনো দলিলে অনভিজ্ঞ দলিল লেখকরা দাতার তথ্যে প্রত্যেক দাতার জমির পরিমান নিদৃষ্ট করে না দিয়ে স্ব স্ব অংশ অনুযায়ী জমি দিয়েছেন কথা লিখে দেন। এক্ষেত্রে, খতিয়ানের মালিগণের অংশ সমান সমান না হয়ে একটু জটিল হলে খতিয়ানের দাতার ভাগে জমি জমির পরিমান লিখতে সমস্যায় পড়তে হয়।

খতিয়ানের মালিকের স্ব স্ব বা নিজ অংশ বের করার জন্য আমাদের ফ্রি ওয়েবটুল রয়েছে যা দিয়ে একই খতিয়ানের এক বা একাধিক দাগের অংশ মাত্র এক ক্লিকেই বের করা যায়: 

খতিয়ানের অংশ বা হিস্যা ক্যালকুলেটর লিংক: খতিয়ানের অংশ ক্যালকুলেটর

প্রত্যেকের খতিয়ানের অংশ বের করার পর যদি জমির পরিমান দলিলে দাতাগণের প্রদানকৃত জমির থেকে বেশি হয়ে যায় তাহলে দলিলের জমির পরিমান অনুযায়ী তাদের জমির অনুপাত বের করতে হয়। যেমন: ৫ জন দাতার খতিয়ান/দাগে অংশ অনুযায়ী জমি ৬:৭:১৩:৪৫:৫৪ শতক করে। কিন্তু  তারা ৫ জন মিলে আপনাকে দলিলে জমি প্রদান করেছে ২০ শতক। তাহলে কার ভাগ থেকে কতটুকু জমি আপনার নামজারিতে আসবে তা ১ ক্লিকেই বের করতে পারবেন আমাদের অনুপাত ক্যালকুলেটর দিয়ে।

অনুপাত ক্যালকুলেটর লিংক: অনুপাত ক্যালকুলেটর

খতিয়ানের অংশ ক্যালকুলেটর, অনুপাত ক্যালকুলেটর ও উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর লিংক KeyToBasics.com যাওয়ার পর সবার সাইটের সবার নিচে টুলস মেনু তে পাবেন। অথবা সাইড মেনুতে টুলস অপশনে পাবেন। এই টুল গুলোর ব্যবহার আপনাদের অনেক জটিল কাজের ঝামেলাকে সহজ করার জন্য বানানো হয়েছে।

যাইহোক, দাতার তথ্য পূরণ করার পর আরো একবার খসড়া সংরক্ষণ করুন: এর সুবিধা হলো সার্ভার জটিলতা বা আপনার নেটওয়ার্ক জটিলতা থেকে নিরাপদ থাকবেন। খসড়া সংরক্ষণ করে খসড়া ট্রেকিং সিটে সেভ করে রাখুন।

এবার খসড়া আবেদন: অপশন দিয়ে আবেদন ফরম এ পুনরায় প্রবেশ করে ৩য় পাতায় কাগজপত্র সংযুক্তি প্রদান করুন এ যান।

নামজারী আবেদন ফরম - প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তি:

নামজারি আবেদনের কাগজপত্র সংযুক্তি অপশনে আসলে প্রয়োজনীয় দলিল, খতিয়ান, ওয়ারিশান সনদ (আপলোড), আলাদা আলাদা অপশন আসবে। আপনি মোবাইল বা কম্পিউটার থাকে কাগজপত্রগুলো স্ক্যান করে আপলোড করবেন। 

  • দলিল গুলো প্রত্যেকটি স্ক্যান করে দলিল নম্বর দিয়ে সেভ করুন। 
  • খতিয়ান ও ওই খতিয়ানের দাখিলা (যদি থাকে) ১পিডিএফ এ খতিয়ান নম্বর দিয়ে সেভ করুন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (অপশনাল), অন্যান্য ডকুমেন্ট যেমন, দুই নামের প্রত্যয়ন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) স্ক্যান করুন সেভ করুন (অন্যান্য তে আপলোডের জন্য)।

প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার:

  • মোবাইল দিয়ে স্ক্যানের জন্য: Camscanner
  • কম্পিউটার দিয়ে স্ক্যানের জন্য: NAPS2
  • ফাইল সাইজ ছোট করার ফ্রি টুল: Sejda PDF Compress, বা ilovepdf PDF Compress

সরাসরি হেল্প এর জন্য হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করুন: 01898674758

এছাড়া স্ক্যান ও ফাইল কমপ্রেস এর জন্য স্পেশাল টুল পেতে  KeyToBasics.com এর Telegram বা  Whatsapp Channel এ জয়েন করুন: Whatsapp ChannelTelegram Channel

স্ক্যান ও আপলোডের পর আরও একবার খসড়া করে নিয়ে পুনরায় আবেদনে প্রবেশ করুন। এতে করে ফাইল আপলোড জনিত সমস্যা নিরাপদ থাকবেন। 

নামজারী আবেদন দাখিল:

নামজারী আবেদন দাখিল বাটনে ক্লিক করলে ৫০ টাকা পেমেন্টের চাইবে:
১।  বামপাশে টোকেন পেমেন্ট অপশন: টোকেন নম্বর ক্লিক করে কপি করে। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের পে বিল অপশনে E Mutation সার্চ করে টোকেন নম্বর বসিয়ে ৫০ টাকা পেমেন্ট করতে পারেন। 
২। ডানপাশে গেটওয়ে পেমেন্ট: এটা সব থেকে সহজ ও দ্রুত। বিকাশ/নগদ/অন্যান্য নম্বর বসিয়ে OTP আর PIN দিলেই পেমেন্ট হয়ে যাবে।

পেমেন্ট সম্পন্ন হলে আবেদন কপি এবং পেমেন্ট রিসিপ্ট পাবেন।  ডাউনলোড করে আবেদনকারীর ফোল্ডার এ রেখে দিন। এবং প্রিন্ট করে আবেদনকারীকে/গ্রহীতাকে হস্তান্তর করুন।

নামজারি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা ট্র্যাকিং:

নামজারি আবেদন যাচাই এর জন্য এর জন্য "নামজারি আবেদনের সবশেষ অবস্থা" মেনুতে যান। জেলা সিলেক্ট করে, আবেদন কপি বা মোবাইলের এসএমএস থেকে আবেদন নম্বর দিন। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ক্যাপচা বসিয়ে
যাচাই বাটনে ক্লিক করুন।
ট্রিকস: জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ভুল দিলে এর পরিবর্তে ফোন নম্বর নিয়ে ট্র্যাকিং করা যায়। 

নামজারি আবেদনের ধাপ সমূহ - নামজারী আবেদন নিস্পত্তি প্রক্রিয়া:

ধাপ ১: নামজারি আবেদন দাখিলের পর তা সহকারী কমিশনার (ভূমি), বা Assistant Commissioner Land (ACLand)/এসিল্যান্ড এর আইডি তে জমা হয়। 

ধাপ ২: এরপর এসিল্যান্ড ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা Union Land Assistant Officer (ULAO) এর কাছে খতিয়ান ও অন্যান্য বিষয় সঠিক আছে কি না তা যাচাই করার জন্য পাঠান। এই সময় ফোনে এসএমএস আসে এবং একটি আবেদনের কেস নম্বর সহ মেসেজ আসে।  উল্লেখ্য, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তৌশিলদার হিসেবে পরিচিত। 

ধাপ ৩: তৌশিলদার বিস্তারিত যাচাই করে প্রয়োজনে মাঠ পর্যায়ে জমির দখল যাচাই করে এসিল্যান্ডের আইডিতে খসড়া খতিয়ান সহ আবেদন ফেরত পাঠান।  আবেদন ট্র্যাকিং করলে এই খসড়া খতিয়ান ডাউনলোড করা যায়।

ধাপ ৪: এরপর এসিল্যান্ড একটি শুনানির তারিখ ও আদেশ দিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার/কানুনগো এর আইডিতে পাঠান।  কানুনগো শুনানির তারিখ বা এর পূর্বেই যাচাই করে আবার এসিল্যান্ডের আইডিতে ফেরত পাঠান।  এই সময় একটি তারিখ সোহো এসএমএস পাবেন।  অনলাইনেও ট্র্যাকিং করে দেখা যাবে। 

ধাপ ৫: এসিল্যান্ড শুনানির তারিখে আপনার নিকট সকল সকল দলিল ও কাগজপত্রের মূল কপি দেখবেন।  এবং আবেদন মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করতে পারেন। 
নোট: শুনানির তারিখে অনেক উপজেলা ভূমি অফিসে সকল কাগজপত্রের ১সেট ফটোকপি জমা নিয়ে থাকেন।  অনেক ভূমি অফিসে ১ দিন আগে ১ সেট ফটোকপি জমা নিতে পারেন।  বিভিন্ন ভূমি অফিসের নিয়ম কানুন একটু তারতম্য হতে পারে।  অফিসে গিয়ে জেনে নিবেন বাকি বিষয়।  

নামজারি আবেদন মঞ্জুর হলে করণীয়:

নামজারি আবেদন মঞ্জুর হলে সঙ্গে সঙ্গে বা ২-১ দিন পর ডিসিআর এর টাকা জমা করার জন্য এসএমএস আসবে।  তখন আপনি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা ট্র্যাকিং এ গিয়ে ডিসিআর ফি জমা দিয়ে পুনরায় ট্র্যাকিং করলে ডিসিআর ও নামজারি খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারবেন।  পরবর্তীতে হারিয়ে গেলেও এখন থেকে ডিসিআর ও খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারবেন। 

নামজারী খতিয়ানের হোল্ডিং তৈরী ও খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান:

১।  নামজারি খতিয়ান ও ডিসিআর প্রিন্ট করে স্ক্যান করুন।  অথবা ilovepdf Unlocker দিয়ে খতিয়ান ও ডিসিআর আনলক করে ২টা ১পিডিএফ এ সেভ করুন।  উক্ত জমির পুরাতন মালিকের সর্বশেষ কোনো ভূমি উন্নয়ন করের চেক বা দাখিলা থাকলে সেটিও ওই পিডিএফ এর নিচে যুক্ত করুন। 

২।  এরপর ldtax.gov.bd তে নামজারি খতিয়ান মালিকের প্রোফাইল না থাকলে প্রোফাইল করে নিন। 

৩।  প্রোফাইল এ খতিয়ান এর ট্যাব এ গিয়ে খতিয়ানের তথ্য দিয়ে খতিয়ান আপলোড করুন।  হোল্ডিং এর ঘর ফাঁকা রাখুন।  খতিয়ানের হোল্ডিং ফাঁকা রাখুন। 

৪।  নিয়ম অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এই খতিয়ানের জন্য একটি হোল্ডিং অনুমোদন দেবেন এবং বকেয়া ভূমি উন্নয়ন করের পরিমান তুলে দেবেন।  তখন, একটি এসএমএস পাবেন: Your Holding Created Successfully.

৫।  এরপর ldtax.gov.bd এ লগইন করে হোল্ডিং ট্যাব এ গিয়ে খতিয়ান সিলেক্ট করে বকেয়ার পরিমান দেখে বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করুন। খাজনার পরিমান বা কোনো ভুল নিয়ে আপত্তি থাকলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারীর সাথে যোগাযোগ করুন। 

৬।  পেমেন্ট শেষ হলে দাখিলা ট্যাব থেকে ভূমি উন্নয়ন কর এর রশিদ ডাউনলোড করুন। এর পর থেকে প্রতি বছর ldtax.gov.bd এর একাউন্ট এ প্রবেশ করে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারবেন। 

একটি জমির খতিয়ান, ডিসিআর ও  ভূমি উন্নয়ন কর রশিদ হলো জমির চূড়ান্ত মালিকানা। সম্পূর্ণ বিষয়টির ভিডিও টিউটোরিয়াল দেয়া হলো। যেকোনো সমস্যা মেসেজ, গ্রুপ ও চ্যানেলের মাধ্যমে সহযোগিতা নিতে পারবেন:

যোগাযোগ ও সহযোগিতা:

হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ: হোয়াটস্যাপ 
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল: KeyToBasics.com Channel
টেলিগ্রাম চ্যানেল: KeyToBasics.com Channel
আমাদের জমি জমা সংক্রান্ত ফেসবুক গ্রুপ (হেল্প পোস্ট): জমি জমা সংক্রান্ত হেল্প by KeyToBasics.com
ইউটিউব চ্যানেল: Key To Basics
ফেইসবুক পেইজ: Key To Basics

ফুল টিউটোরিয়াল  ইন ভিডিও (আসছে।)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এড ব্লকার Extention/Addon দেখা যাচ্ছে!
আপনার ব্রাউজারে বিজ্ঞাপন বা এড ব্লকার Extention বা Plugin ব্যবহার করছেন।
আসলে, বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আমাদের যা উপার্জন হয় তা আমাদের সাইটি চালানোর শক্তি ও উৎসাহ জাগায়। তাই অনুরোধ করছি, আপনার ব্রাউজারের Extention বা Addon থেকে আমাদের সাইটটি Whitelist করুন। ধন্যবাদ!